সালতামামি
- ফেরদৌসী পারভিন | Ferdawsi Pervin
- Feb 7
- 4 min read
সালতামামি ----
২০২৪ সাল।
মনে হচ্ছে এইতো সেদিন ২০২৩ সালের শেষ সূর্য অস্তমিত হয়েছিল। রাতের আকাশ আলোকিত হয়েছিলো আতশবাজির ঝলকানিতে। সারা পৃথিবীতে নতুন বছর বরণ করার জন্য মানুষ উন্মুখ হয়েছিল শত পাওয়া না পাওয়ার হিসেব দূরে রেখে। বাংলাদেশ তার ব্যাতিক্রম ছিলনা। যদিও তখন বাংলাদেশে ২০২৪ এর জাতীয় সংসদের নির্বাচন নিয়ে অস্থিরতা চলছিলো। পতিত সরকার আবার তৃতীয় বারের মতো ক্ষমতা কুক্ষিগত করার সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করছিলো। আমেরিকারর দৌড় ঝাঁপ ,ভারতের সরাসরি হস্তক্ষেপ পতিত সরকারকে ক্ষমতায় রাখার বদ্ধপরিকর অবস্থান। সবকিছু মিলিয়ে ২০২৪ সালের প্রথম সূর্য উদিত হয়।
প্রথম মাসের শেষের দিকে নির্বাচন হয়ে যায় এবং যথারীতি পতিত সরকার ক্ষমতায় আসে। কিন্রু হায় তখনো কেউ জানতোনা জুন মাস তাদের জন্য অপেক্ষা করেছে। মহা পরাক্রমশালী হাসিনা সরকারকে ছাত্র জনতার তাড়া খেয়ে পালাতে হবে। কিন্তু পালিয়েছে।
বহু প্রাণের বিনিময়ে দেশ হায়েনার হাত থেকে রক্ষা পেয়েছে। বহু আহত মানুষের কান্না ছয়মাস ধরে বাংলাদেশের আকাশ ভারী করেছে। জানিনা আরো কতদিনে এ কান্নার অবসান হবে।
এবছর কিছু কথা ভাইরাল হয়েছে যেমন মুরব্বি মুরব্বি উহু উহু , শেখ হাসিনা পালায় না , মাসুদ তুমি ভালো হইলা না , পালাবো না , দরকার হলে ফখরুল ইসলামের বাড়িতে উঠবো ,হাউন আংকেল , ওয়েট ওয়েট সেনাবাহিনীকে শেষ করতে দাও , নাইস এন্ড এট্রাকটিভ ইত্যাদি ইত্যাদি। কিন্তু ইতিহাস বড় নির্মম সবাইকে পালাতে হয়েছে। বাংলাদেশের ব্যার্থতা যে , এইসব হায়েনাদের আমরা পালাতে দিয়েছি।
নায়ক নায়িকা , গায়ক গায়িকা থেকে বায়তুল মোকাররমের খতিব পর্যন্ত পালিয়েছে। বেরিয়ে এসেছে পলাতক সরকারের বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার চুরির ঘটনা। অনেকে পালাতে পারলেও কিছু কুশীলব পালাতে পারেনি যারা জেলের সেলে দিন কাটাচ্ছে। বেশ কয়েকজন ধরা খেয়েছে যারা ভেবেছিলেন পতিত সরকারকে তেল দিয়ে মধু চেটে খাওয়া যাবে। কিন্তু কথাই বলেনা আজকে রাজা , কালকে ফকির। অন্যায় করলে আর তা মাত্রা ছাড়ালে বিচার প্রকৃতিই দিয়ে দেয় যেকোন মাধ্যমে। প্রকৃতির বিচার যে সবাই দেখতে পায় বা প্রকৃতি নিজেই সর্বোচ্চ সাজা দেয় তা আমরা তা দেখেছি। মহাপরাক্রমশালী ও নিষ্ঠুরতম সরকার প্রধানের পলায়ন দেখেছে এদেশের মানুষ।
শেখ মুজিবকে ৭৫ এ একবার হত্যা করা হয়েছে। দ্বিতীয়বার হত্যা করা হলো ২০২৪ এ। হত্যাকারী শেখ হাসিনা। শেখ হাসিনার জঘন্যতম কাজগুলো যদি না হতো তাহলে শেখ মুজিবের অধ্যায়গুলো নতুন করে সামনে আসতো না বলেই আমার মনেহয়। কিন্তু হাসিনার মাফিয়া মনোভাব শেখ মুজিব কে নিশ্চিহ্ন করে দিল। এই পরিবারের দূর্নীতি আকাশ ছুঁয়েছে। এমন দূর্নীতিবাজ সরকারকে ক্ষমতায় রাখতে ভারত সর্বোচ্চ হস্তক্ষেপ করেছে।
ছাত্র জনতার অভ্যুত্থান ও বিপ্লবের পর আমারা প্রতিদিন ভারতীয় মিডিয়ার বিনোদনে বিনোদিত হচ্ছি। চুলকানির মলম বিক্রেতা দাদা দিদিরা প্রতিনিয়ত মিথ্যে প্রচারণা চালাচ্ছেন অঙ্গভঙ্গির মাধ্যমে। সত্যি বলতে কি আমার মজাই লাগে তাদের মিথ্যার প্রপাগাণ্ডা দেখে শুনে। আমি অবশ্য অবাক হইনা কারণ এই শ্রেণির অধিকাংশের মিথ্যা কথা বলাই তাদের পেশা। শুধু তাই নয় ভারত বিভিন্ন ভাবে বাংলাদেশকে বিপদে ফেলার চেষ্টা করে যাচ্ছে। হাসিনার সময়েই শুধু নয় স্বাধীনতার পর থেকে এতো সুবিধা নিয়েছে এবং গত হাসিনা সরকারের সময়ে এতো নিয়েছে যে ,এখন তা বন্ধ হওয়ায় মাথা খারাপ হয়ে গিয়েছে। অন্যায় এবং সার্বভৌমত্ব বিরোধী চুক্তি করেছে হাসিনা যা ভারতের জন্য খুবই লাভজনক। ভারত হাসিনা সহ সকল মাফিয়াদের আশ্রয় দিয়ে প্রতিমূর্হতে হিন্দ্যু কার্ড খেলে যাচ্ছে। অথচ এদেশে হিন্দুরা সব ক্ষেত্রেই তাদের দেশের চেয়ে ভালো আছে। বরং বাংলাদেশের অনেক হিন্দু বর্তমানে ভোল পালটে হিন্দু বন্ধু ,প্রতিবেশির ঘরবাড়ি দখল করার জন্য হামলা চালিয়ে ভারতে পালিয়ে যেতে বাধ্য করেছে। এই কাজ করেছে ভোল পালটানো হিন্দু। এরকম খবরও আছে । তাই ভারতের ব্যাখ্যা সর্বাংশে মিথ্যা যা তাদের চরিত্রের বহিঃপ্রকাশ। ভারতের নোংরামি ও কমেডি দেখতে দেখতে ২০২৪ শেষ হতে যাচ্ছে।
ভারতের কার্যকলাপে ভারত বিদ্বেষ বেড়েছে এবং ভারত নিজেরাই প্রমাণ করেছে যে তারা ,বন্ধু নয়। তারা প্রতিবেশী এবং খারাপ প্রতিবেশী। যে প্রতিবেশী ,প্রতিবেশীর ভালো চায়না সে খারাপ প্রতিবেশী। যা ভারত নিজেরাই প্রমাণ করেছে।
২০২৪ এর বড় প্রাপ্তি বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি যা এতো বছরে বি এন পি পারেনি। প্রফেসর ইউনুস স্যারের প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্ব নেয়া। একজন নোবেল লরিয়েট এদেশের দায়িত্ব নিয়েছেন যা পৃথিবীর আর কোন দেশে নেই। তিনি ৮ আগষ্ট প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্ব নেন যাঁকে জেলে পাঠানোর কথা তিনিই কান্ডারী হলেন। আর সবচেয়ে বড় ঘটনা যা আর কখনো ঘটেনি ৮০০ বছরের ইতিহাসে । এক লক্ষ্মণ সেন আর শেখ হাসিনা পালিয়েছেন। আর কোন রাষ্ট্র প্রধান পালাননি। " শেখ হাসিনা পালায়না "
রাজনৈতিক অঙ্গনে ঘটনাবহুল একটি বছর শেষ হতে যাচ্ছে কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে বিপ্লবের প্রধানতম দাবীদার ছাত্রদের কিছু ঘোষণার মাধ্যমে। জানিনা কি থাকছে সে ঘোষণায়। যাই থাকুক ,দেশে নতুন বছরে শান্তি আসুক ,,দূর্নীতিমুক্ত হোক এবং সবার অধিকার নিশ্চিত হোক।
এবার আসি নিজের কথায়। কেমন কাটালান ২০২৪? ভালো মন্দ মিশিয়ে কেটে গেছে ২০২৪। বয়স বেড়েছে আরো একবছর। নিজের জন্য ভাবতে শুরু করেছি। নিজের কথা আগেও ভেবেছি কিন্তু আমার চারপাশের মানুষরা আগে ভাবনায় ছিলো তারপর নিজের বিষয়। নতুন বছরে নিজের বিষয় আগে তালিকায় থাকবে। ২০২৪ এ দুটি বই প্রকাশের অপেক্ষায় প্রকাশকের কাছে। এবছরে অনেকের মুখোশ খুলে নোংরা মুখটা বেরিয়ে এসেছে। এটা বড় প্রাপ্তি। বেশকিছু নারীকে স্বাবলম্বী করতে পেরেছি। এটা ভালো লাগার অন্যতম দিক। আমার সবচেয়ে নেতিবাচক দিক হচ্ছে সবাইকে বিশ্বাস করা। সেই দূর্বলতা থেকে বেরিয়ে আসতে পেরেছি ২০২৪ সালে যা আমাকে ক্ষতির হাত থেকে ভীষণ ভাবে রক্ষা করবে। চোখের সমস্যা বেড়েছে। দেখতে সমস্যা হচ্ছে। পরিবারের সদস্যরা ভালো আছে। পরিবারে নতুন সদস্য এসেছে। আলহামদুলিল্লাহ সবাই ভালো আছে। আমার গুল্টুর অনেকগুলি অর্জন ২০২৪ কে আলোকিত করেছে।
সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি ঘটেছে আমার জীবনে ২০২৪ সালে।
আল্লাহর ঘরে যাওয়ার ইচ্ছে ছিল সেটি পূরণ হয়েছে। আলহামদুলিল্লাহ ,, কাবা শরিফ তাওয়াফ , রাসুলুল্লাহ সাঃ এর রওজামুবারক দর্শন ,মোনাজাত ,নফল নামাজ আদায় ও সালাম পৌঁছে দেয়া। উমরাহ পালন শেষে সুস্থ শরীরে ফিরে আসা।
যেখানে রসুলের জন্ম ,মৃত্যু ,নবুত প্রাপ্তি , ইসলাম প্রচার সেইসব স্থান দেখার সৌভাগ্য হয়েছে ২০২৪ সালে।
আজকের সূর্য অস্তমিত হবার সাথে সাথে ২০২৪ কালের গর্ভে হারিয়ে যাবে। থেকে যাবে আনন্দ বেদনার স্মৃতি। ২০২৫ সাল
দেশের ,মানুষের শান্তি নিয়ে আসুক। দূর্নীতিবাজ ,,বাটপার ,,প্রতারক মুক্ত হোক বাংলাদেশ। ভালো থাকুক দেশের সাধারণ মানুষ। সবাইকে ২০২৫ সালের শুভেচ্ছা।
শুভ নববর্ষ। HAPPY NEW YEAR.
প্রফেসর ফেরদৌসী পারভিন
৩১ ,১২ ,,২০২৪
উত্তরা।
Comments