top of page

ভোরের করচা -- ১

  • Writer: ফেরদৌসী পারভিন | Ferdawsi Pervin
    ফেরদৌসী পারভিন | Ferdawsi Pervin
  • May 3, 2024
  • 2 min read

Updated: May 4, 2024


র্নিঘুম রাত কাটতে চায় না । অপেক্ষায় ছিলাম পাখির ডাকের । এখনো এখানে আকাশে আলোর ফুটকি দেখা দিলে পাখি ডাকে অথবা পাখি ডাকলে আলোর ফুটকি দেখা দেয় । যেভাবেই বলি না কেন !


রাস্তায় নামতেই মনে হলো আজ আকাশের দখল নেবে সূর্য মামা। এই মাসেতো মাটি ফাটা রোদ থাকার কথা । যাকে চৌচির বলে । প্রচন্ড রোদে আর তীব্র গরমে হাঁসফাস ধরে যাবে মানুষের । কাঁঠাল পেকে হাঁসফাস করবে । সে যাই হোক সব কেমন বদলে যাচ্ছে । প্রকৃতি মানুষ সবকিছু ।


অনেকটা পথ চলে এলাম । সকালের নেশা ধরানো একটা সারল্য আছে । আমি বার বার এর প্রেমে পড়ে যাই । বিগত পাঁচ বছর ফুটতে থাকা আলোয় আমি ঢাকার বাইরের জেলায় যেতাম। ড্রাভিং সিটে বসে একটি জনপদের ঘুম ভাঙতে দেখার ভালো লাগাই আলাদা । গান শুনতে শুনতে গাড়ি চালানো আর দুপাশের সবকিছু প্রতিদিন নতুন রূপে চোখের ফ্রেমে বন্দি করার মজা তাড়িয়ে তাড়িয়ে উপভোগ করি।


এক জায়গায় কামিনী ঝরে সাদা হয়ে আছে । এত কাছে এসেও গন্ধ পেলাম না । তবে কি গোলাপ , রজনীগন্ধার মতো কামিনীও সুবাস হারালো ?


যেখানে আমার আবাস সেখানকার রাস্তা দীর্ঘ । এ প্রান্তে দাঁড়ালে অন্যপ্রান্তের মানুষকে বোঝা যায় না ,খুব ক্ষুদ্র মনে হয় । এখনো এখানে সুবেশী দালানবাড়ির পাশের খালি প্লটে কায়িক শ্রমবেঁচা মানুষ দিনকে টেনে নিয়ে যায় রাতের দিকে। এবং তারাই নিজের ফেলে আসা আঙিনাটুকু এখানে ধরে রাখতে চায় । তারই একটাতে মাচাংএ লাউ , জালি কুমড়ো ঝুলছে । দেখে মন ভালো হয়ে গেল । হ্ঠাৎ মোরগের ডাকে সচকিত হলাম । এক মূর্হেতে এই ইট ,কাঠ , পাথর ,গৃহস্থবাড়ির উঠোন হয়ে গেল । থমকে দাড়িয়ে দেখলাম সেই দৃশ্য যা অনকদিন দেখি না । অনেকগুলি দেশী মোরগ মুরগী বিভিন্ন সাইজের । আমাকে অবাক করে দিয়ে একটা মা মুরগীর সাথে বাচ্চারা বেড়িয়ে এলো । এও অনেকদিন দেখা হয় না। মনে পড়ে গেল আমার শৈশবের কথা । আম্মা মুরগী পালতো । দোতালা সরকারি কোয়ার্টার । উঠোন ছিল তাতে । আস্ত একটা বাড়ি অনেকটা জায়গা নিয়ে । কত যে ডালিম হতো । অন্যসব গাছপালাতো ছিলই । আম্মা মাঝে মাঝে বাচ্চা ফুটাতো মা মুরগী দিয়ে। আমরা দিন গুনতাম কবে বাচ্চা বেরুবে। আম্মার এসব নখ দর্পণে। আর আম্মার সাহায্যকারী খোঁজখবর রাখতো । তারপর একদিন তুলোর বলের মতো বাচ্চা বেরিয়ে আসতো। আমার খুব ইচ্ছে হতো হাতে নিতে কিন্তু উপায় ছিল না । হাত বাড়াতেই মা ছুটে আসতো আঁচরে দিতে । তাই সাহসে কুলোতো না । এর মাঝেও চিল ছোঁ মেরে নিয়ে যেত।। তখন দেখেছি মা মুরগীর রণরঙ্গিনী মূর্তি।


এই সাতসকালে ফেলে আসা সময়গুলো ভেসে এলো শরতে মেঘের মতো । যা ইচ্ছে থাকলেও বেশীক্ষণ স্থায়ী হতে পারে না । যাযাবর বাতাস উড়িয়ে নেয়। যাযাবর জীবন থমকে গেলেও থেমে থাকে না । খুব ইচ্ছে করলো ছোট হয়ে যেতে । যেখানে ফরিঙের পেছনে একবেলা কাটিয়ে দেয়া যায় । বৃত্তের বাইরের এই অনাস্বাদিত স্বাদকে নিয়ে ফিরে চললাম নিজ বৃত্তে । দিন তখন মেঘরঙা ঘোমটা খুলে ফেলেছে । ঝলমল করছে বিভা । নতুন পাতায় বিভার সমর্পণ দেখছি আমার একফালি সবুজে ।


শুভ সকাল

15 . 6 . 2020

 
 
 

Recent Posts

See All
সালতামামি

সালতামামি ---- ২০২৪ সাল। মনে হচ্ছে এইতো সেদিন ২০২৩ সালের শেষ সূর্য অস্তমিত হয়েছিল। রাতের আকাশ আলোকিত হয়েছিলো আতশবাজির ঝলকানিতে। সারা...

 
 
 
হাসপাতাল

হাসপাতালের করিডরে অপেক্ষার প্রহর গুনি , কিছুক্ষণ আগে বন্ডে সাক্ষর করে এলাম। কি আশ্চর্য একজনের জীবনের ভালো মন্দ ! কয়েকটা অক্ষরে সীমাবদ্ধ।...

 
 
 
নাক কেটে যাত্রা ভঙ্গ ---

বাংলাদেশের সরকারের উচিত হিন্দু অধ্যুষিত এলাকায় যেয়ে ডকুমেন্টারি তৈরি করে প্রচার করা যাতে সবাই জানতে পারে কি ঘটছে ,বাংলাদেশের হিন্দুরা...

 
 
 

Comments


©2024-25 | MKD

bottom of page