top of page

আমাদের আম্মা

  • Writer: ফেরদৌসী পারভিন | Ferdawsi Pervin
    ফেরদৌসী পারভিন | Ferdawsi Pervin
  • May 28, 2024
  • 3 min read

মা দিবসে সবাই মনে রাখুন মাতৃত্ব এক অমানবিক প্রক্রিয়া এবং একই সাথে এক গৌরবান্বিত অধ্যায় । একজন নারী সবচেয়ে কঠিন দায়িত্ব পালন করে থাকেন পৃথিবীতে ।


আলাদা করে আম্মাকে নিয়ে লেখা হয়নি ।আম্মা সব সময় সাথেই থাকে কাছাকাছি না থাকলেও । লেখাটা মা দিবসে লিখলাম ,কিন্তু আলাদা করে কোন সমাজেই মা দিবস পালন করার প্রয়োজন আছে বলে মনে করিনা । পৃথিবীতে প্রতিদিন মা দিবস । কারন যাকে ছাড়া পৃথিবীর অস্তিত্ব কল্পনা করা যায়না তাকে একটা দিবস দেয়ার কোন মানে হয়না। যাইহোক এটা একটা দিন , উপমা ,উৎপ্রেক্ষার মত অলংকার দেয়া । নাহলেও মায়ের সমান কিছুনা ।


আমার মা ছিলেন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক । আম্মা একবছর আগে পড়ে গেলে কোমরের হাড় ভেঙে যায় এবং তা অপারেশর মাধ্যমে রিপ্লেস করা হয় । আম্মা এখন সুস্থ কিন্তু আগের আম্মাকে আর কোথাও খুঁজে পাওয়া যায়না। এখানেই আমার সব খারাপ লাগা । আম্মার বয়স হয়েছে ঠিকই কিন্তু আমার অবচেতন মন আগের আম্মাকে খোঁজে । রাগ হয় নাপেয়ে । আম্মা প্রচন্ড রাগী ছিলেন । এছাড়া সব তার গুন । এতো ভালো সেলাই করতেন উল ,এম্ব্রোডারি । আমার সমস্ত জামা আম্মা সেলাই করে দিতেন । ছোটবেলা স্টেজে যে পারফর্ম করতাম তার সবটাই আম্মার সেখানো । প্রচুর পুরস্কার পেয়েছি । রান্নায় অসাধারণ। আমি আম্মার মত রান্না পারিনা । পরিস্কার পরিচ্ছন্নতার কথা বলার অপেক্ষা রাখেনা । ঘর মুছে দিলে বাইরে থেকে খেলে এসে ঘরে ঢোকা যেতো না। হাঁটু গেড়ে যেতে হতো ।


আম্মা ঈদের সকালে গোসল করে নতুন শাড়ি পরে রান্না করতো । সারাদিন রান্নাবান্না ,মেহমানদারি সমস্ত শেষে রাতে পরনের শাড়িটি খুলে এমন করে ভাঁজ করে রাখতেন মনে হতো নতুন শাড়ি । শাড়িটি যে সারাদিন পরে ছিলেন তা মনে হতো না । সেই আম্মার শাড়ি এখন সবসময় খুলে যাচ্ছে । আমার খুব খারাপ লাগে এই আম্মাকে দেখতে । আর কষ্ট হলে আমার রাগ হয় । এটা আমার চরিত্রের একটি নেগেটিভ দিক ।

আম্মা অনেক সুন্দরী । হাঁটু পর্যন্ত চুল ,উজ্জ্বল শ্যামলা রঙ , বড় বড় চোখ ,উন্নত নাসা অপূর্ব সুন্দরী নারী আমার মা । যথেষ্ট লম্বা আম্মা।


মানুষের জন্য তিনি উদার হস্ত । সব সময় মানুষের প্রতি তার হাত প্রসারিত থাকতো । অনেক ছাত্রকে লেখাপড়ার খরচ দিয়েছেন । সেই আম্মা এখন কিছু মনে রাখতে পারে না । আম্মা সবসময় পরিপাটি থাকতো কিন্তু এখন একেবারে এলোমেলো । সারাজীবন অত্যন্ত পরিপাটি আম্মাকে দেখে এখন এই এলোমেলো মানুষটাকে দেখে খুব কষ্ট হয় । রাগ হয়। যারা আম্মাকে আগে দেখেছে তারা বলতে পারবে আম্মা কতটা রুচিসম্মত মানুষ ।


এই হয়তো জীবন । জীবনের কাছে নতি স্বীকার করতে হয় আমাদের । খুব গুছিয়ে শাড়ি পরা আম্মার ছবিটা চোখে থাকে সবসময় । খুব গুছিয়ে কথা বলতেন । স্কুলে, ক্লাবে চমৎকার বক্তব্য দিতেন । আম্মার হাতের লেখা খুব সুন্দর ছিল । এখন লিখতে সমস্যা হয় । অসম্ভব পরিশ্রমী একজন মানুষ আম্মা । হালকা রঙের শাড়িতে কপালে টিপ বিশাল খোঁপা মাথা জোড়া । এই স্মৃতি খুব স্পষ্ট । আরো একটা স্মৃতি জ্বল জ্বল করে । আম্মা দুপুরে চুল এলিয়ে শুয়ে আছে । বালিশের পাশ দিয়ে চুল মেঝেতে স্তুপাকারে লুটাচ্ছে । আম্মার চেহারা, চলা, বলা সবকিছুই ছিল অন্য যে কোন ১০টি নারীর চেয়ে আলাদা । আম্মাকে কবিতা লিখতেও দেখেছি কয়েকবার । গল্পের বই পড়তেন কিছুদিন আগ পর্যন্ত সাস্কৃতিক বিষয়ে সবকিছুর হাতে খরি আম্মার হাতে । আম্মার গুনের ধারে কাছে যেতে পারিনি । জীবনের সাথে যুদ্ধ করার ক্ষমতা অপরিসীম । আমি অবশ্য নানান ছুতোয় রাগ করি। আসলে আমার রাগ করার আর কোন জায়গা নাই পৃথিবীতে । তাই সুযোগ পেলেই আম্মার ওপর রাগ ঢালি । পরে খুব খারাপ লাগে । জানি আম্মার কিছু করার নাই কিন্তু ওই যে বললাম আমার আর কোন রাগ করার জায়গা নেই ।মাকে নিয়ে কোন কথাই শেষ হয়না । তাকে একটি দিবসে সীমাবদ্ধ করা যায়না । সেই চেষ্টাও করছিনা । যদি বলা হয় সমুদ্রটাকে আঁজলায় ভরেন । তাহলে কি সম্ভব? না সম্ভব নয় । তাই চেষ্টা করে সময় নষ্ট করা গাধামি । যেহেতু মা দিবসে আমরা মা নিয়ে সব কথা সম্পূর্ণ করে দেব তা সম্ভব নয় । আমি শুধু আমার আম্মা সহ সকল আম্মা ভালো থাকুক এটাই চাই । আর কিছুনা ।

ধন্যবাদ ।




 
 
 

Recent Posts

See All
সালতামামি

সালতামামি ---- ২০২৪ সাল। মনে হচ্ছে এইতো সেদিন ২০২৩ সালের শেষ সূর্য অস্তমিত হয়েছিল। রাতের আকাশ আলোকিত হয়েছিলো আতশবাজির ঝলকানিতে। সারা...

 
 
 
হাসপাতাল

হাসপাতালের করিডরে অপেক্ষার প্রহর গুনি , কিছুক্ষণ আগে বন্ডে সাক্ষর করে এলাম। কি আশ্চর্য একজনের জীবনের ভালো মন্দ ! কয়েকটা অক্ষরে সীমাবদ্ধ।...

 
 
 
নাক কেটে যাত্রা ভঙ্গ ---

বাংলাদেশের সরকারের উচিত হিন্দু অধ্যুষিত এলাকায় যেয়ে ডকুমেন্টারি তৈরি করে প্রচার করা যাতে সবাই জানতে পারে কি ঘটছে ,বাংলাদেশের হিন্দুরা...

 
 
 

Comments


©2024-25 | MKD

bottom of page