সালমা আক্তার পাখির কথা
উম্মে সালমা আক্তার পাখি আমার প্রাক্তন ছাত্রী । ঢাকা টিচার্স ট্রেনিং কলেজে সে আমার সরাসরি ছাত্রী ছিল। সে ছিল নবম ব্যাচে শিক্ষায় অনার্স এর শিক্ষার্থী । কলেজে পড়া অবস্থায় তার বিয়ে হয়ে যায় ।
বিয়ের পরে লেখাপড়া চালিয়ে যাওয়া যে কোন সমাজে এবং আমাদের সমাজেতো বটেই অত্যন্ত পরিশ্রম ও ধৈর্যের কাজ । সেই কাজটি পাখি অত্যন্ত সাফল্যের সাথে সম্পন্ন করেছে । বর্তমানে সিনিয়র শিক্ষক (বাংলা) খিলগাঁও গভঃ কলোনি স্কুল এন্ড কলেজ। থানা পর্যায় নতুন কারিকুলামে মাস্টারেইনার হিসেবে কাজ করে ।
পূর্বেই বলেছি এইচ এস সি ২য় বর্ষ থেকে সংসার। সময়টা ২০০৩ সাল থেকে।
এরপর অনার্স ঢাকা টিচার্স ট্রেনিং কলেজ থেকে শিক্ষায় অনার্স এবং এম এড এ মাস্টার্স শেষ করে, প্রাইম ব্যাংক জব করেছে দুই বছর ২০১০,২০১১। এরপর মেয়ের জন্ম ২০১১ তে যা খুব সাধারণ ঘটনা আমাদের দেশে তাই ঘটে পাখির জীবনে । বাচ্চা পালতে গিয়ে চাকুরি ছাড়তে হয় তাকে । ২০১২তে শিক্ষাক নিবন্ধন পরীক্ষা দিয়ে স্কুল ও কলেজের চাকুরির জন্য নির্বাচিত হয় । কিন্তু সে বেছে নেয় স্কুল ।
এরপর স্কুলে জয়েন করে ২০১৩ সালে। জয়েন্ট ফ্যামিলি থেকে এতটা পথ হাঁটতে কতটা পরিশ্রম করতে হয়েছে তা সহজে অনুমেয় । সেই সাথে এটাও প্রমাণিত হয় যে , পরিশ্রম করলে সাফল্য আসবেই । জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডেও পুস্তক পরিমার্জনেও কাজ করেছে পাখি ।
পাখির দুটি কন্য ও একটি পুত্র সন্তান । বড় মেয়ে ৮ম শ্রেনিতে,মেঝ মেয়ে ৩য় শ্রেনিতে।ছেলের বয়স দুই বছর আট মাস।তিনটি সন্তান সামলে স্কুলে কাজ করা খুব সহজ নয়। নানা প্রতিবন্ধকতা এসেছে কিন্তু পাখি দমে যায়নি । তবু্ও তার কন্ঠে উচ্চারিত হয় , নিজের আর্থিক স্বাবলম্বিতার কথা। নিজের পায়ের নিচে মাটি শক্ত করতে পেরেছে এটাই তার সাফল্য । মাঝে মাঝে পাখি আবৃত্তি করে শখ করে ।
পাখির সাথে যখন কথা হয় তখন সে বলে , আপনাকে দেখে সবসময় ভেবেছি ম্যাডাম পারলে আমি পারবো না কেন? বিভিন্ন সময়ে সমস্যা তৈরি হলে আপনাকে সামনে রেখে নিজেকে প্রবোধ দিয়েছি ।
একজন শিক্ষক হিসেবে এটাই আমার বড় প্রাপ্তি বলেই আমার মনে হয় । সন্তানের পর ছাত্র ছাত্রীর সাফল্য একজন শিক্ষককে সবচেয়ে বেশি খুশি করে । তাদের সাফল্যকে নিজের সাফল্য বলে মনে করে । পাখির আরো একটি কথা আমাকে নাড়া দিয়েছে ভীষণভাবে । সে খুব উচ্ছ্বসিত হয়ে বলে , " ম্যাডাম আপনি যখন গাড়ি নিয়ে কলেজে ঢুকতেন তখন আপনাকে দেখলেই মন চাইতো গাড়ি চালাই । গাড়ি না চালালেও আমি এখন স্কুটি চালাই । শুরু করেছিলাম শখ থেকে এখন সেই শখ প্রয়োজনে পরিনত হয়েছে। স্কুলে যাতায়াত অনেক সহজ হয়ে গিয়েছে । " একটি দক্ষতা ও চেষ্টা পাখির জীবনকে অনেকটাই সহজ করে দিয়েছে । অর্থনৈতিক স্বাবলম্বিতা তাকে দিয়েছে আত্মবিশ্বাস। পাখির মতে এ সব কিছু সম্ভব হয়েছে তার বাবা মায়ের এবং শিক্ষকদের দোয়ায়।
আমি একটি বিষয় বলতে চাই যে ,মেয়ে সন্তানের লেখাপড়ার ক্ষেত্রে যত্নবান হতে হবে । কখনোই বাবা মায়ের ভাবা উচিত নয় , মেয়েকে বিয়ে দিতে হবে তাই মেয়ের জন্য লেখাপড়ার পেছনে বেশি ব্যায় না করা । ছেলে মেয়ে উভয়েই সন্তান আর তাই দুজনকেই সমান সুযোগ দিতে হবে । ছেলে মেয়েরও পরিশ্রমের মাধ্যমে নিজেকে স্বাবলম্বী করা যেন বাবা মায়ের পাশে অর্থনৈতিক সক্ষমতা নিয়ে দাঁড়াতে পারে । পাখির শেষ কথা ছিল ," অনেক ভালো আছি। তবে এতো দূর আসতে অনেক কাঠখড়ি পোহাতে হয়েছে। পথটা সহজ ছিল না।"
১৩,১২,২০২৪
উত্তরা