top of page

সাবিকুনের গল্প

আমার ছাত্রী নাম সাবিকুন নাহার। আমার চাকুরী জীবনের শেষ পর্যায়ের ছাত্রী । চাকুরী থেকে অবসর নিয়ে চলে এসেছি কর্মস্থল থেকে। চলে আসার পর অনেক ছাত্রী আমার সাথে যোগাযোগ রাখে। শুধু শেষ জীবনের ছাত্রীরাই নয় আমার প্রথম কর্মজীবনের ছাত্র ছাত্রীদের সাথেও আমার যোগাযোগ রয়েছে। আর এখনতো সোশ্যাল মিডিয়ার যুগ। খুব সহজেই যোগাযোগ রাখা যায়। সেই সুবাদেই সাবিকুন নাহার আমার সাথে যুক্ত হয়। অবাক হলাম যখন ও আমাকে বললো ,প্রথম বর্ষতে ভর্তির পর নবীন বরণ অনুষ্ঠানে আয়ার কথা শোনার পর থেকে আইডল মানে। সে এখন অবশ্য অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী। অর্থনীতি বিষয়ে ইডেন কলেজে লেখাপড়া করছে। মেয়েটি কয়েকদিন আগে ফোনে আমার সাথে অনেকটা সময় কথা বলেছে। সাবিকুন এর সাথে কথা বলে এই ছোট্ট মেয়েটির সংগ্রামের কথা শুনে মন খারাপ হলো। পাশাপাশি আমি নিজে অনুপ্রাণিত হলাম ওর কথায়। কথার মধ্যে দিয়ে তার পরিবারের কথা জানতে পারলাম।


তার বাবা -মৃত শহিদুল ইসলাম। তিনি ছিলেন স্কুলের প্রধান শিক্ষক ছিলেন। মা -- খাদিজা খাতুন। তিনি গৃহিনী। দুই ভাই বোনের মধ্যে সাবিকুন বড়। ছোট ভাই লেখাপড়া করে।


যেহেতু বাবা মারা গেছে তাই সংসারে আর্থিক টানাপোড়েন লেগেই থাকে। আমি জানতে চাইলাম লেখাপড়ার খরচ কিভাবে চালাচ্ছো? তখন সে জানায় , ৪ টি টিউশনি করে সেই টাকায় লেখাপড়ার খরচ চলছে।


অর্থনীতি একটি শক্ত সাবজেক্ট পাঠ্যবিষয়ে। অনেক পরিশ্রম করতে হয় লেখাপড়ার ক্ষেত্রে। তারপর ৪ টি টিউশনি করে লেখাপড়া করা সত্যিই অনেক পরিশ্রমের ,যা সাবিকুন করে যাচ্ছে। কঠোর পরিশ্রম আর ইচ্ছা শক্তির জোরে এগিয়ে চলেছে। সাবিকুন চায় জীবনে অনেকদূর এগিয়ে যেতে। সে তার শিক্ষকদের প্রতি অপরিসীম শ্রদ্ধার কথাও বলেছে। সবচেয়ে মজার কথা বলেছে আমার মতন হতে চায় কলেজের প্রথম দিন থেকে। এই কথা বলার ইচ্ছে তার অনেকদিনের। আমি তখন অধ্যক্ষ ছিলাম তাই সাহস করে বলতে পারেনি। যখন তার সাথে কথা বলছিলাম তখন সে কথাটি জানিয়ে দিল। আরো অনেক কথা হলো তার সাথে। তার জবানিতে কিছু কথা তুলে ধরছি।


আমি সাবিকুন নাহার

শখ: কবিতা লিখা,গল্প পড়া।

আমরা এক ভাই, একবোন।আমার এই পথ চলায় শ্রদ্ধার সাথে স্মরনীয় হয়ে থাকবে আমার শিক্ষকমন্ডলীরা।উনাদের আদর্শ ও অনুপ্রেরণায় আজ আমি এই পর্যন্ত এসেছি।


গ্রাম থেকে এসএসসি পাস করে যখন গাজীপুর মহিলা কলেজে আসি প্রফেসর ফেরদৌস ম্যাম কে দেখি।ম্যাম নিজে গাড়ি ড্রাইভ করে কলেজে আসতেন।আমি তখন থেকেই স্বপ্ন বুনি নিজে কিছু করব। নিজের পা এ দাঁড়াব।আজও অক্লান্ত পরিশ্রমের সাথে এগিয়ে যাচ্ছি।


সবশেষে আমার একটি কবিতার দুই লাইন দিয়ে বলব

স্বপ্ন আমার বহুদূর

ইচ্ছে আমার সীমাহীন

তার মাঝে লুকিয়ে আমি

থাকতে চাই সারাদিন।


শেষে কবিতার চারটি লাইন লিখেছে।

ওর সাথে কথা বলে ফোন রেখে মনের মধ্যে দুই ধরনের অনুভূতি হলো। খারাপ পাশাপাশি ভালো। খারাপ লাগলো তার পরিশ্রম করে আয় উপার্জন করে লেখাপড়া করার কথা শুনে। ভালো লাগলো তার দায়িত্ববোধ এবং অদম্য ইচ্ছে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার। পিতৃহীন একটি মেয়ের এই ইচ্ছে এবং সাহস আমাকে মুগ্ধ করে। ভালো লাগলো পরিশ্রমের মাধ্যমে সে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তার প্রতি শ্রদ্ধা বেড়ে গেল।


অনেকটা সময় কথা বলার পর আমার সাথে যোগাযোগ রাখার কথা বলে ফোন ছেড়ে দিলাম। ফোন ছাড়ার পর অনেকটা সময় মেয়েটির সবকথা আচ্ছন্ন করে লাগলো। মনে হলো এরকম কত সাবিকুন আছে যারা প্রতিটি মূর্হতে জীবন যুদ্ধ করতে হচ্ছে বা করে যাচ্ছে। আমরা কজনের কথা জানি বা খবর রাখি !

ভালো থাকুক সকল পরিশ্রমী মেয়ে। এগিয়ে যাক অভিষ্ঠ লক্ষ্যে।


প্রফেসর ফেরদৌসী পারভিন

উত্তরা

২,১২,২০২৪

©2024-25 | MKD

bottom of page