top of page

পাহাড়ের কাব্যের দ্বিতীয় পর্ব

অধ্যায় -- ১

২০২১ সাল থেকে সহায়তা প্রদান শুরু করেছিলাম আগেই বলেছি । বছরে দুইবার সহায়তা দেয়ার জন্য খাগড়াছড়ি যাতায়াত করছিলাম সেই সাথে সাহায়তার পরিমাণ বাড়ছিল । ২০২২ সালে ভিডিও কলের মাধ্যমে আবারো সুতা দেয়া হলো । এরপরেই আমি অস্ট্রেলিয়া চলে যাই । সুতা এবং মোরা বানানোর সরঞ্জামাদি পেয়ে নারীরা সাবলম্বী হতে শুরু করেছে অনেকে সেলাই মেশিনে সেলাই করে উপার্জন করছে । বীণা ত্রিপুরার এবং সবুজের কাছে সহায়তা প্রত্যাশী নারীরা যোগাযোগ করতে থাকে । মাটিরাঙায় রহমান মুজিব সাহেবের কাছেও মোরা তৈরির উপকরণের পাওয়ার জন্য অনুরোধ করতে থাকে । আমি দেশের বাইরে থেকেই জানতে পারি । ২০২২ সালের শেষের দিকে দেশে ফিরে খাগড়াছড়ি যাব ঠিক করেছিলাম কিন্তু ভীষণ অসুস্থ হয়ে পড়ি । এখানে বলে রাখা ভালো যে সমস্ত সহায়তার টাকা ব্যাক্তিগত । ফলে টাকার ব্যবস্থা নাহলে যেতে পারতাম না । তাই সুস্থতার অপেক্ষায় থাকলাম এবং টাকাও একটি বড় বিষয় ছিল । ফোনে জানতে পারি ওখানকার কাজের খবর । বীণা তৈরি প্রডাক্টের ছবি পাঠায় । সেগুলো বিক্রি করে তারা ভালো পুঁজি পাচ্ছে । শুনে ভালো লাগলো । তারা যদি পুঁজি নষ্ট না করে তাহলে তাদের পেছন ফিরে তাকাতে হবেনা । একথা তাদের বোঝাতে চেষ্টা করি । ভাষাগত সমস্যা থাকায় ফোনে কথা বলে সুবিধা করতে পারতাম না ।

এর মাঝে আমার মেয়ে এবং মেয়ের সিনিয়র ফ্রেন্ড সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেয় । তারা আর্থিক সহায়তা করে । তাদের সহায়তা এবং নিজে অর্থের ব্যবস্থা করে খাগড়াছড়ি যাওয়ার উদ্দোগ নিলাম ।

যাইহোক ঠিক করলাম ১৬ ডিসেম্বর পন্য তৈরির সহায়তা দেব । সেই মোতাবেক ১৫ই ডিসেম্বর ২০২২ তারিখ খাগড়াছড়ি রওনা দিলাম । বলে রাখা ভালো সুতো ও মোরা তৈরির উপকরণ কেনার জন্য সবুজের ব্যাংক একাউন্টে টাকা পাঠিয়ে দিতাম । তাছাড়াও সবুজের ঘোরাঘুরির জন্য বিকাশে টাকা পাঠিয়ে দিতাম। খাগড়াছড়ি কাজ করতে যেয়ে যা খরচ হয়েছে তার সমস্ত বহন করেছি আমি । গাড়ি ভাড়া থেকে শুরু করে যতধরণের খরচ থাকে তার সবকিছু । কারন সবুজ ,বীণা আমাকে যে সময় দিয়ে ,পরিশ্রম দিয়ে সাহায্য করেছেন তার জন্য আমি কৃতজ্ঞ ।

আর্থিক দায় সমস্তটাই ছিল আমার এবং আমাদের যা আমি সম্পাদন করেছি ।

বিজয় দিবসের প্রাক্কালে ছুটে চলেছি খাগড়াছড়ির পথে । শরীর পুরোপুরি সুস্থ নাহলেও মন ভালো হয়ে গিয়েছিল কারন বিজয় দিবসে আমি অনেক নারীর পাশে দাঁড়াতে পারবো ।

স্বাধীন দেশের আর্থিক ভাবে সক্ষম নারী হিসেবে আরো অনেক নারীর পাশে দাঁড়াতে পারছি এটা আমার মন ভালো করে দিল ।

সকালে পৌঁছেই ফ্রেস হয়ে চলে গেলাম চেঙি নদীর ধারে । সেখানেই সব নারীরা জমায়েত হবে । তিনটি পাহাড়ি গ্রাম থেকে তারা আসছে ফলে এই স্থানটি নাকি সবার জন্য সুবিধা হবে তাই নির্বাচন করা হয়েছে । সেখানে যেয়ে রঙের মেলা দেখলাম । রঙিন থামিতে নারীরা অপেক্ষা করছে । আমাকে একটি ওয়াল ম্যাট তাদের তৈরি উপহার দিল । সেখানে সেদিন অনেক সংবাদকর্মী উপস্থিত ছিলেন । অনেকের সাথে পরিচয় হল । রহমান মুজিব , জসীমউদ্দিন জয়নাল ,আরিফুল ইসলাম ,জয়ন্তী দেওয়ান । আরো অনেকে ছিলেন যাদের সাথে আমার আগেই পরিচয় হয়েছে । সুতা বিতরণের পর নদী পেরিয়ে চেলোপাড়া গেলাম পূর্বের বিতরণকৃত সুতার কাজ দেখতে । বেশ কয়েকটি নারীকে দেখলাম কাজ করছে ।

দুপুর গড়াতে শুরু করেছে । উপস্থিত সব সংবাদকর্মীদের নিয়ে দুপুরের খাবার খেলাম শহরের এক হোটেলে । পাহাড়ের মজার খাবার । পছন্দ করি কিন্তু ঝাল একটু বেশি বলে অসুবিধা হয় । সংবাদকর্মীদের সৌজন্য স্মারক দিলাম ডায়েরি ও পেন । কদিন পর নতুন বছর শুরু হবে । আমার স্মৃতিটুকু তাদের কাছে থাক ।

ফিরে গেলাম গাইরিংএ । সারারাত জার্নি এবং সকাল থেকে দৌড়ানোর ফলে ক্লান্ত লাগছিল । বয়স জানান দিচ্ছে বুঝতে পারছি । তবু্ও ছুটে চলি ছুটতে হয় ।

বিকেল বেলা আলুটিলা এম্পি থিয়েটারে পাহাড়ি জীবনের একটি নাটিকা উপভোগ করলাম । আলুটিলা চমৎকার একটি পর্যটন কেন্দ্র হয়েছে এর সার্বিক উন্নয়নের ফলে । সন্ধ্যে নেমে গেছে । পাহাড়ের গায়ে গায়ে জোনাক পোকার মত আলো জলে উঠেছে । বাতাসে শীতের টান । ক্লান্তি আমায় ফিরতে বলছে । ফিরে চললাম দুদিনের আবাসে ।


©2024-25 | MKD

bottom of page